ইউরোপের ১৭টি নন-সেনজেন দেশের তালিকা ২০২৫ (আপডেটেড)

আসসালামু আলাইকুম, ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি! ২০২৫ সালে ইউরোপে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছেন? সেনজেন ভিসা নিয়ে অনেকেরই অনেক চিন্তা থাকে।

কিন্তু জানেন কি, ইউরোপের বেশ কিছু দেশ আছে যেখানে যেতে সেনজেন ভিসার প্রয়োজন হয় না?

এই ব্লগপোস্টে ইউরোপের নন-সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোর তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সেই সাথে, এই দেশগুলোতে ভ্রমণের সুবিধা, অসুবিধা এবং দরকারি কিছু তথ্যও জানাব।

তাহলে চলুন, আর দেরি না করে শুরু করা যাক!

ইউরোপের নন-সেনজেন ভুক্ত দেশগুলো কি কি?

ইউরোপের অনেক দেশ সেনজেন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। এর মানে হলো, এই দেশগুলোতে যেতে আপনার সেনজেন ভিসার দরকার হবে না। নিচে ২০২৫ এর আপডেট অনুযায়ী নন-সেনজেন দেশগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:

  • আয়ারল্যান্ড
  • যুক্তরাজ্য (ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, উত্তর আয়ারল্যান্ড)
  • সাইপ্রাস
  • আলবেনিয়া
  • আন্ডোরা
  • বেলারুশ
  • বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
  • মন্টিনিগ্রো
  • উত্তর মেসিডোনিয়া
  • সার্বিয়া
  • তুরস্ক
  • ইউক্রেন
  • কসোভো

এই দেশগুলোর মধ্যে কিছু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য, আবার কিছু ইইউর বাইরে অবস্থিত। তাই এদের ভিসা এবং ভ্রমণের নিয়মকানুনগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

কেন এই দেশগুলো ভ্রমণ করবেন?

নন-সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের অনেকগুলো সুবিধা আছে। এদের মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ভিসা জটিলতা কম: সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করা বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া। এই দেশগুলোতে ভিসার নিয়মকানুন তুলনামূলকভাবে সহজ। কিছু দেশের জন্য আপনি On Arrival ভিসা অথবা ই-ভিসার (e-Visa) সুবিধাও পেতে পারেন।
  • ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি: এই দেশগুলোর নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে, যা দেখার মতো। প্রতিটি দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
  • খরচ কম: সেনজেন অঞ্চলের দেশগুলোর তুলনায় এই দেশগুলোতে সাধারণত খরচ কম হয়। থাকা-খাওয়া এবং ঘোরার জন্য আপনার বাজেট তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হবে।
  • কম ভিড়: জনপ্রিয় সেনজেন দেশগুলোতে অনেক ভিড় থাকে। যারা একটু শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে ঘুরতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই দেশগুলো আদর্শ।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ নন-সেনজেন দেশের বিস্তারিত তথ্য

এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নন-সেনজেন দেশ নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনাকে আরও সহজ করে তুলবে:

যুক্তরাজ্য (United Kingdom)

যুক্তরাজ্য চারটি আলাদা রাজ্য নিয়ে গঠিত: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্য রয়েছে।

দেখার মতো স্থান:

  • লন্ডন: বাকিংহাম প্যালেস, টাওয়ার ব্রিজ, ব্রিটিশ মিউজিয়াম।
  • এডিনবরা: এডিনবরা ক্যাসল, রয়্যাল মাইল।
  • কার্ডিফ: কার্ডিফ ক্যাসেল, মিলিনিয়াম সেন্টার।
  • বেলফাস্ট: টাইটানিক বেলফাস্ট, সিটি হল।

ভিসা তথ্য:

যুক্তরাজ্যের জন্য আপনাকে আলাদাভাবে ভিসার আবেদন করতে হবে। সাধারণত, ভিজিট ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ, তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অন্যান্য নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আবেদন করা উচিত।

আয়ারল্যান্ড (Ireland)

আয়ারল্যান্ড তার সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহাসিক দুর্গ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষের জন্য বিখ্যাত। ডাবলিন শহরটি আধুনিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক চমৎকার মিশ্রণ।

দেখার মতো স্থান:

  • ডাবলিন: ট্রিনিটি কলেজ, সেন্ট স্টিফেন গ্রিন।
  • গালওয়ে: ক্লিফস অফ মোহের, স্প্যানিশ আর্চ।
  • কর্ county: ব্লার্নি ক্যাসেল, ইংলিশ মার্কেট।

ভিসা তথ্য:

আয়ারল্যান্ডের ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে ডাবলিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য জানতে হবে। সাধারণত, ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হয়।

ক্রোয়েশিয়া (Croatia)

ক্রোয়েশিয়া তার উপকূলীয় সৌন্দর্য, প্রাচীন শহর এবং অসংখ্য দ্বীপের জন্য পরিচিত। এখানকার মনোরম সৈকত এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

দেখার মতো স্থান:

  • ডুব্রোভনিক: সিটি ওয়ালস, স্ট্র্যাডুন।
  • স্প্লিট: ডায়োক্লেটিয়ান প্রাসাদ, রিভা প্রোমেনাড।
  • হভার: হভার টাউন, স্পানজোলা ফোর্ট্রেস।

ভিসা তথ্য:

ক্রোয়েশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হলেও এটি সেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত নয়। ক্রোয়েশিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অন্যান্য নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে হবে।

তুরস্ক (Turkey)

তুরস্ক একই সাথে ইউরোপ ও এশিয়ার অংশ হওয়ায় এর সংস্কৃতিতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিশ্রণ দেখা যায়। ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক স্থাপত্য, ক্যাপাডোকিয়ার এরিয়াল ভিউ এবং তুরস্কের খাবার সারা বিশ্বে বিখ্যাত।

দেখার মতো স্থান:

  • ইস্তাম্বুল: হাজিয়া সোফিয়া, ব্লু মস্ক, টপকাপি প্রাসাদ।
  • ক্যাপাডোকিয়া: হট এয়ার বেলুন রাইড, আন্ডারগ্রাউন্ড সিটি।
  • আন্টালিয়া: পুরাতন শহর (কালেচি), ড্যুডেন জলপ্রপাত।

ভিসা তথ্য:

তুরস্কের ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন করা যায়। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ই-ভিসার সুবিধা রয়েছে, যা সহজেই পাওয়া যায়।

আলবেনিয়া (Albania)

আলবেনিয়া ধীরে ধীরে পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এর প্রধান কারণ হলো দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান এবং সাশ্রয়ী ভ্রমণ খরচ।

দেখার মতো স্থান:

  • তিরানা: স্ক্যান্ডারবার্গ স্কয়ার, জাতীয় ঐতিহাসিক জাদুঘর।
  • সারান্দা: বুট্রিন্ট জাতীয় উদ্যান, লেক বুট্রিন্ট।
  • বেরাত: বেরাত ক্যাসেল, ওসুমী নদী।

ভিসা তথ্য:

আলবেনিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা-ফ্রি প্রবেশাধিকারও রয়েছে।

২০২৫ সালের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

২০২৫ সালে ইউরোপের নন-সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের আগে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার:

  • ভিসার নিয়মকানুন: প্রতিটি দেশের ভিসার নিয়মকানুন আলাদা। তাই ভ্রমণের আগে সেই দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে সঠিক তথ্য জেনে নিন।
  • বাজেট: আপনার ভ্রমণের বাজেট আগে থেকে ঠিক করে নিন। কোন দেশে থাকা-খাওয়া ও ঘোরার খরচ কেমন, তা জেনে প্ল্যান করলে সুবিধা হবে।
  • ভাষা: কিছু দেশে ইংরেজি তেমন প্রচলিত নয়। তাই সেই দেশের স্থানীয় কিছু ভাষা শিখে গেলে আপনার জন্য সুবিধা হবে।
  • পরিবহন: ইউরোপের এই দেশগুলোতে বাস, ট্রেন এবং প্লেনের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যায়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবহন ব্যবস্থা বেছে নিন।
  • স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা: ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন এবং ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স করতে ভুলবেন না।

কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)

সেনজেন ভিসা কি?

সেনজেন ভিসা হলো ইউরোপের ২৯টি দেশের একটি ভিসা, যা দিয়ে আপনি এই দেশগুলোতে অবাধে ভ্রমণ করতে পারবেন।

এই দেশগুলো হলো: অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রীস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া।

কোন কোন দেশে ভিসার প্রয়োজন হয় না?

কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য ইউরোপের কিছু নন-সেনজেন ভুক্ত দেশে ভিসার প্রয়োজন হয় না। তবে, এই তালিকা পরিবর্তন হতে পারে, তাই ভ্রমণের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।

আমি কিভাবে ভিসার জন্য আবেদন করব?

ভিসার জন্য আবেদন করার জন্য আপনাকে সেই দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং সেখানে দেওয়া নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে।

ভ্রমণের জন্য সেরা সময় কখন?

ইউরোপের দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো গ্রীষ্মকাল (জুন থেকে আগস্ট) এবং শরৎকাল (সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর)। এই সময় আবহাওয়া সাধারণত ভালো থাকে এবং পর্যটকদের ভিড়ও কম থাকে।

আমি কিভাবে আমার ভ্রমণকে আরও সাশ্রয়ী করতে পারি?

ভ্রমণকে সাশ্রয়ী করার জন্য আপনি আগে থেকে টিকিট বুক করতে পারেন, হোস্টেল বা গেস্ট হাউসে থাকতে পারেন এবং স্থানীয় খাবার খেতে পারেন। এছাড়া, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে খরচ কমাতে পারেন।

২০২৫ সালের সেরা কয়েকটি নন-সেনজেন রুটের প্ল্যান

এখানে ২০২৫ সালের জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য নন-সেনজেন রুটের প্ল্যান দেওয়া হলো:

  1. ঐতিহাসিক রুট: লন্ডন – ডাবলিন – এডিনবার্গ (যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড)
  2. উপকূলীয় রুট: ডুব্রোভনিক – স্প্লিট – সারান্দা (ক্রোয়েশিয়া ও আলবেনিয়া)
  3. সাংস্কৃতিক রুট: ইস্তাম্বুল – তিরানা – স্কোপজে (তুরস্ক, আলবেনিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়া)

এই রুটগুলো আপনাকে ইউরোপের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ করে দেবে।

উপসংহার

আশা করি, ২০২৫ সালের ইউরোপের নন-সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোর তালিকা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনাকে আরও সহজ করে তুলবে।

ভিসা জটিলতা এড়িয়ে যারা ইউরোপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এই দেশগুলো হতে পারে আদর্শ গন্তব্য। তাহলে আর দেরি কেন, আজই আপনার পছন্দের দেশটি বেছে নিন আর বেরিয়ে পড়ুন নতুন এক রোমাঞ্চকর অভিযানে!

যদি এই বিষয়ে আপনার আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর যদি এই ব্লগটি ভালো লেগে থাকে, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *