ইউরোপের ২৯টি সেনজেন দেশের তালিকা ২০২৫ (আপডেটেড)
আসসালামু আলাইকুম, ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি! ২০২৫ সালে ইউরোপে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন?
তাহলে সেনজেন ভিসা (Schengen Visa) সম্পর্কে আপনার একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। কারণ, এই ভিসা থাকলে আপনি ইউরোপের ২৯টি দেশে অবাধে ঘুরতে পারবেন!
আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা ২০২৫ সালের সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনাকে আরও সহজ করে দেবে।
ইউরোপ মানেই যেন স্বপ্নিল হাতছানি। চোখ জুড়ানো ল্যান্ডস্কেপ, ঐতিহাসিক স্থাপত্য আর সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিশ্রণ। আর এই সব কিছু উপভোগ করতে হলে সেনজেন ভিসা আপনার জন্য একটা দারুণ সুযোগ।
তাহলে চলুন, জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের সেনজেনভুক্ত দেশগুলো সম্পর্কে খুঁটিনাটি।
সেনজেন অঞ্চল: এক নজরে
সেনজেন অঞ্চল হলো ইউরোপের ২৬টি দেশের সমন্বিত একটি এলাকা, যেখানে ভিসার নিয়মকানুন অনেকটা একই রকম। এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো একটি দেশের ভিসা থাকলে, আপনি অন্য দেশগুলোতেও অবাধে ভ্রমণ করতে পারবেন।
তবে ২০২৫ সাল নাগাদ এই তালিকায় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানে এই অঞ্চলে ২৯টি দেশ রয়েছে।
সেনজেন চুক্তি কী?
১৯৮৫ সালে জার্মানির সেনজেন নামক একটি ছোট শহরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত সহজ করা এবং border control তুলে দেওয়া।
এর ফলে ইউরোপের নাগরিকরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে সহজে ভ্রমণ করতে পারে। শুধু তাই নয়, এই চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কও উন্নত হয়েছে।
২০২৫ সালের সেনজেনভুক্ত ২৯টি দেশের তালিকা
এখানে ২০২৫ সালের সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো:
দেশ | রাজধানী | মুদ্রা |
---|---|---|
অস্ট্রিয়া | ভিয়েনা | ইউরো |
বেলজিয়াম | ব্রাসেলস | ইউরো |
ক্রোয়েশিয়া | জাগরেব | ইউরো |
চেক প্রজাতন্ত্র | প্রাগ | চেক ক্রোনা |
ডেনমার্ক | কোপেনহেগেন | ড্যানিশ ক্রোন |
এস্তোনিয়া | তাল্লিন | ইউরো |
ফিনল্যান্ড | হেলসিংকি | ইউরো |
ফ্রান্স | প্যারিস | ইউরো |
জার্মানি | বার্লিন | ইউরো |
গ্রিস | এথেন্স | ইউরো |
হাঙ্গেরি | বুদাপেস্ট | ফোরিন্ট |
আইসল্যান্ড | রেইকজাভিক | আইসল্যান্ডিক ক্রোনা |
ইতালি | রোম | ইউরো |
লাটভিয়া | রিগা | ইউরো |
লিথুয়ানিয়া | ভিলনিয়াস | ইউরো |
লিচেনস্টাইন | ভাদুজ | সুইস ফ্রাঙ্ক |
লুক্সেমবার্গ | লুক্সেমবার্গ সিটি | ইউরো |
মাল্টা | ভাল্লেত্তা | ইউরো |
নেদারল্যান্ডস | আমস্টারডাম | ইউরো |
নরওয়ে | অসলো | নরওয়েজিয়ান ক্রোন |
পোল্যান্ড | ওয়ারশ | পোলিশ জলোটি |
পর্তুগাল | লিসবন | ইউরো |
স্লোভাকিয়া | ব্রাটিস্লাভা | ইউরো |
স্লোভেনিয়া | লুব্লিয়ানা | ইউরো |
স্পেন | মাদ্রিদ | ইউরো |
সুইডেন | স্টকহোম | সুইডিশ ক্রোনা |
সুইজারল্যান্ড | বার্ন | সুইস ফ্রাঙ্ক |
বুলগেরিয়া (১ জানুয়ারী ২০২৫) | সফিয়া | বুলগেরিয়ান লেভ |
রোমানিয়া (১ জানুয়ারী ২০২৫) | বুখারেস্ট | রোমানিয়ান লিউ |
এই দেশগুলোতেই আপনি সেনজেন ভিসা দিয়ে ২০২৫ সালে ঘুরতে যেতে পারবেন।
নতুন কোন দেশ যুক্ত হতে পারে?
সাইপ্রাস ও মন্টিনিগ্রো ২০২৬ সালের মধ্যে সেনজেন অঞ্চলে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এই দুটি দেশ যুক্ত হয়, তাহলে সেনজেন এলাকার পরিধি আরও বাড়বে এবং ভ্রমণ আরও সহজ হবে।
১টি গুরুত্বপূর্ণ সেনজেন দেশের বিস্তারিত তথ্য
ক্রোয়েশিয়া (Croatia)
ক্রোয়েশিয়া তার উপকূলীয় সৌন্দর্য, প্রাচীন শহর এবং অসংখ্য দ্বীপের জন্য পরিচিত। এখানকার মনোরম সৈকত এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
দেখার মতো স্থান:
- ডুব্রোভনিক: সিটি ওয়ালস, স্ট্র্যাডুন।
- স্প্লিট: ডায়োক্লেটিয়ান প্রাসাদ, রিভা প্রোমেনাড।
- হভার: হভার টাউন, স্পানজোলা ফোর্ট্রেস।
ভিসা তথ্য:
ক্রোয়েশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হলেও এটি সেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত নয়। ক্রোয়েশিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অন্যান্য নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে হবে।
কেন সেনজেন ভিসা গুরুত্বপূর্ণ?
সেনজেন ভিসা থাকলে আপনি ইউরোপের অনেকগুলো দেশে ভিসার ঝামেলা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন। একবার ভিসা পেলে আপনি বিভিন্ন দেশ যেমন – ফ্রান্সের প্যারিস, ইতালির রোম, স্পেনের বার্সেলোনাতে সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন।
ভিসার জন্য কীভাবে আবেদন করবেন?
সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করা বেশ সহজ। আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে ভিসার ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে।
এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন – পাসপোর্ট, ছবি, ভ্রমণের টিকিট, হোটেলের রিজার্ভেশন এবং আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণপত্রসহ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
সেনজেন ভিসার প্রকারভেদ
সেনজেন ভিসা মূলত কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ভিসাটি বেছে নিতে হবে। নিচে কয়েকটি প্রধান ভিসার প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:
- পর্যটন ভিসা (Tourist Visa): এটি সবচেয়ে সাধারণ ভিসা, যা পর্যটকদের জন্য দেওয়া হয়। এই ভিসার মাধ্যমে আপনি সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ঘুরতে যেতে পারবেন।
- ব্যবসায়িক ভিসা (Business Visa): যদি আপনি ব্যবসার কাজে ইউরোপে যেতে চান, তাহলে এই ভিসা আপনার জন্য প্রযোজ্য।
- মেডিকেল ভিসা (Medical Visa): চিকিৎসার জন্য ইউরোপের কোনো দেশে যেতে চাইলে এই ভিসার প্রয়োজন হবে।
- শিক্ষার্থী ভিসা (Student Visa): ইউরোপের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যেতে চাইলে এই ভিসা দরকার হবে।
কোন ভিসার জন্য কী কী ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
ভিসার আবেদনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়। নিচে একটি সাধারণ তালিকা দেওয়া হলো:
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)
- recent ছবি
- ভিসা আবেদন ফর্ম
- ভ্রমণের টিকিট ও হোটেলের রিজার্ভেশন
- আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট)
- ভ্রমণ বীমা (Travel insurance)
সেনজেন ভিসা পাওয়ার নিয়মাবলী
সেনজেন ভিসা পাওয়ার জন্য কিছু নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হয়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো:
- সঠিকভাবে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
- আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ দেখাতে হবে।
- ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।
ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কীভাবে বাড়াবেন?
ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন:
- আবেদনের সময় সব তথ্য সঠিকভাবে দিন।
- আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ দিন।
- আগের ভ্রমণ ইতিহাস (যদি থাকে) উল্লেখ করুন।
- সাক্ষাৎকারের সময় আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিন।
সেনজেন ভিসা নিয়ে কিছু দরকারি টিপস
- ভিসার জন্য আবেদন করার আগে ভালোভাবে রিসার্চ করুন।
- আবেদনের সময়সীমা সম্পর্কে জেনে নিন।
- ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ধৈর্য ধরুন।
- ভিসা পাওয়ার পর ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন।
ভ্রমণের সময় কী কী মনে রাখতে হবে?
- পাসপোর্ট এবং ভিসার কপি সবসময় সাথে রাখুন।
- স্থানীয় আইনকানুন সম্পর্কে জেনে নিন।
- জরুরি অবস্থার জন্য কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখুন।
- নিজের জিনিসপত্রের দিকে খেয়াল রাখুন।
২০২৫ সালে সেনজেন ভ্রমণ: কিছু আকর্ষণীয় স্থান
ইউরোপে দেখার মতো অনেক সুন্দর জায়গা আছে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় স্থান নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- প্যারিস, ফ্রান্স: প্যারিসকে ভালোবাসার শহর বলা হয়। এখানকার আইফেল টাওয়ার, ল্যুভর মিউজিয়াম এবং শাঁস-এলিস Palace দেখার মতো।
- রোম, ইতালি: রোম হলো প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র। কলোসিয়াম, ভ্যাটিকান সিটি এবং ফোরাম এখানকার প্রধান আকর্ষণ।
- বার্সেলোনা, স্পেন: বার্সেলোনা তার স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। এখানকার গাউদির Sagrada Familia এবং পার্ক গুয়েল দেখতে প্রচুর পর্যটক আসেন।
- সুইজারল্যান্ড: পাহাড় আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে সুইজারল্যান্ড আপনার জন্য সেরা গন্তব্য। জুরিখ এবং ইন্টারলাকেনের মতো শহরগুলো খুবই জনপ্রিয়।
কোথায় থাকবেন?
ইউরোপে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের হোটেল ও হোস্টেল পাওয়া যায়। আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। Airbnb-এর মাধ্যমেও আপনি স্থানীয়দের বাড়িতে থাকার সুযোগ পেতে পারেন।
সেনজেন ভিসা নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
এখানে সেনজেন ভিসা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
সেনজেন ভিসা কত দিনের জন্য পাওয়া যায়?
সেনজেন ভিসা সাধারণত ৯০ দিনের জন্য দেওয়া হয়। আপনি এই সময়ের মধ্যে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে পারবেন।
সেনজেন ভিসার খরচ কত?
সেনজেন ভিসার খরচ সাধারণত ৮০ ইউরো। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই খরচ কম বা বেশি হতে পারে।
সেনজেন ভিসা কতবার ব্যবহার করা যায়?
সেনজেন ভিসা এক বা একাধিকবার ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
সেনজেন ভিসা পেতে কতদিন লাগে?
সেনজেন ভিসা পেতে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশি সময় নিতে পারে।
সেনজেন ভিসা রিজেক্ট হলে কী করবেন?
যদি আপনার সেনজেন ভিসা রিজেক্ট হয়, তাহলে আপনি আপিল করতে পারেন। আপিলের জন্য আপনাকে রিজেকশনের কারণ জানতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবার আবেদন করতে হবে।
উপসংহার
ইউরোপ ভ্রমণ অনেকের কাছেই একটা স্বপ্ন। আর সেনজেন ভিসা সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ। ২০২৫ সালের সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর তালিকা এবং ভিসার নিয়মাবলী সম্পর্কে জেনে আপনি আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা শুরু করতে পারেন।
আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য সহায়ক হবে।
যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার ইউরোপ ভ্রমণ সুন্দর ও নিরাপদ হোক, এই কামনা করি। আর হ্যাঁ, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না!